কুয়েতে বাংলাদেশের নারী প্রশিক্ষকেরা সেনাদের প্রশিক্ষণ দেবে
কুয়েতে বাংলাদেশের নারী প্রশিক্ষকেরা সেনাদের প্রশিক্ষণ দেবে। বাংলাদেশি নারী প্রশিক্ষক পাঠাতে যাচ্ছে কুয়েতে, জোরদার হচ্ছে সামরিক সহযোগিতা । বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে কুয়েতি সেনাবাহিনীতে নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে এবার বাংলাদেশ থেকে নারী প্রশিক্ষক পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। এই তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আশারক আল আওসাত।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ হুসেইন স্থানীয় দৈনিক আল-জারিদাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, কুয়েতি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকে নারী প্রশিক্ষক পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হলো—বাংলাদেশি নারী সেনা সদস্যদের কুয়েতি সেনাবাহিনীতে নবনিযুক্ত নারী সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে যুক্ত করা।রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এই উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। পাশাপাশি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামরিক খাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুয়েত সরকার সেনাবাহিনীতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট কিছু সামরিক পদে নারী সদস্যদের যোগদানের অনুমতি দেয় কুয়েত। এটি ছিল দেশটির সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। পরবর্তীতে, ২০২৫ সালের জুনে, কুয়েত সরকার আলি আল সাবাহ সামরিক কলেজে নারী অফিসার ক্যাডেটদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে। এটি ছিল প্রথমবারের মতো একটি সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য এমন সুযোগ তৈরি করা।
কুয়েতি উপ-প্রধানের মন্তব্য
এই প্রসঙ্গে কুয়েতি সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান, জেনারেল পাইলট শেখ সাবাহ আল-জাবের আল সাবাহ, চলতি বছরের এপ্রিলে বলেন—“নারীদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি কুয়েতি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের অংশ।”তার এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, কুয়েত নারীদের সেনাবাহিনীতে যুক্ত করার ব্যাপারে কৌশলগত গুরুত্ব দিচ্ছে।
আরও,নারী প্রশিক্ষক পাঠানো ছাড়াও বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার আরও বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত সৈয়দ হুসেইন জানান, তার সাম্প্রতিক বৈঠকে নিচের বিষয়গুলো উঠে আসে—
১ । বিশেষায়িত সামরিক উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২ । মুবারক আল-আবদুল্লাহ যৌথ কমান্ড ও স্টাফ কলেজ এবং বাংলাদেশের সমমানের সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রশিক্ষক বিনিময় ।
৩ । যৌথ কমান্ডো প্রশিক্ষণ পুনরায় চালু করা ।
৪ । সামরিক ব্যারাক ও আবাসন নির্মাণে বাংলাদেশের প্রকৌশল সহায়তা ।
৫ । সামরিক ব্যান্ড পরিচালনা ও প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের ভূমিকা ।
৬ । ছদ্মবেশী সামরিক পোশাক সরবরাহ ।
কুয়েতে বাংলাদেশি সামরিক সদস্যদের অবস্থান
বর্তমানে কুয়েতে প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি সামরিক সদস্য কর্মরত আছেন। এদের অনেকে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্যপ্রযুক্তি ইউনিট, নিরাপত্তা বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। এই অবস্থান বাংলাদেশের সামরিক শক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সক্ষমতার প্রমাণ। নারী প্রশিক্ষক পাঠানো, যৌথ প্রশিক্ষণ এবং সামরিক বিনিময় কর্মসূচি—এসব উদ্যোগ কুয়েত ও বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। পাশাপাশি এটি নারীদের ক্ষমতায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভূমিকা আরও জোরালো করার একটি বড় পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।