আজকের বিশ্ব

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে আছে কারা

আজ আমরা জানব বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে আছে কারা । বিশ্বের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদল নিয়মিত ঘটলেও এমন কিছু নেতা আছেন, যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে আছেন। বছরের পর বছর তাঁরা নিজেদের ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন। আফ্রিকার ছোট-বড় দেশ থেকে শুরু করে রাশিয়ার মতো

বিশ্বশক্তিতেও এমন নেতার দেখা মেলে। কেউ নিয়মিত নির্বাচন জিতে ক্ষমতায় থাকেন, কেউ আবার কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করে নিজেদের অবস্থান অটুট রাখেন। আবার অনেকেই ক্ষমতার মেয়াদ বাড়াতে সাংবিধানিক সংশোধনী কিংবা রাজনৈতিক কৌশলের আশ্রয় নেন। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শীর্ষ ১০ রাষ্ট্রনেতা সম্পর্কে জানা গেলে বৈশ্বিক রাজনীতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পল কাগামে

পল কাগামে রুয়ান্ডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট, যিনি গণহত্যা-পরবর্তী দেশকে স্থিতিশীল ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্বে রুয়ান্ডা আফ্রিকার দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির এক উদাহরণে পরিণত হয়েছে। রুয়ান্ডার সাবেক তুতসি বিদ্রোহী নেতা পল কাগামে ১৯৯৪ সালে তুতসিবিরোধী গণহত্যার অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরপর ২০০০ সালের এপ্রিলে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মধ্য আফ্রিকার ছোট দেশ রুয়ান্ডাকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, মোট ২৫ বছর ধরে।

ভ্লাদিমির পুতিন

ভ্লাদিমির পুতিন টানা ২৬ বছর ধরে রাশিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথমে রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর পরপরই ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হন। পুতিন তখন থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে সে সময় রাশিয়ার সংবিধানে ধারাবাহিকভাবে কোনো প্রেসিডেন্টের পরপর দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না।

সেই নিয়ম মেনে পুতিন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও তিনি রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এ সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে সংবিধান অনুযায়ী আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুতিন ক্ষমতায় ফেরেন।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে এসে আবারও একই সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা সামনে আসে। তবে এবার পুতিন সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেন এবং সফলভাবে তা কার্যকর করেন। এর ফলে তাঁর জন্য কমপক্ষে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ তৈরি হয়।

ইসমাইল ওমর গেলে

ইসমাইল ওমর গেলে ১৯৯৯ সাল থেকে জিবুতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অর্থাৎ টানা ২৬ বছর ধরে তিনি দেশটির শাসনক্ষমতায় আছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে গেলের নেতৃত্বে জিবুতি আফ্রিকার শাসনব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি পঞ্চম দফায় জয়লাভ করেন এবং ক্ষমতায় বহাল থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী ২০২৬ সালে দেশটিতে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জিবুতির সংবিধান অনুযায়ী, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে পারেন না। বর্তমানে গেলের বয়স ৭৮ বছর। গত মে মাসে আফ্রিকার প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য আফ্রিকা রিপোর্ট তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, তিনি কি ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন? উত্তরে গেলে বিষয়টি স্পষ্টভাবে অস্বীকার না করে সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন। তবে আবার প্রার্থী হতে হলে তাঁকে অবশ্যই সংবিধান সংশোধনের পথে যেতে হবে।

আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো

১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশের রাষ্ট্রপ্রধান আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো। ৭১ বছর বয়সী তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। সোভিয়েত যুগের দমননীতি ব্যবহার করে লুকাশেঙ্কো ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে ৩১ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন এবং দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন।

ইসাইয়াস আফওয়ারকি

সাবেক বিদ্রোহী নেতা ইসাইয়াস আফওয়ারকি ৩২ বছর ধরে হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলের দেশ ইরিত্রিয়ার শাসনক্ষমতায় আছেন। ইরিত্রিয়া ১৯৯৩ সালে ইথিওপিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই আফওয়ারকি দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর দীর্ঘ শাসনকাল ইরিত্রিয়ার রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের পরিচায়ক। বর্তমানে এই নেতার বয়স ৭৯ বছর। আফওয়ারকির শাসনকালে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার কারণে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হলেও দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোতে তাঁর প্রভাব শক্তিশালী এবং অব্যাহত রয়েছে।

এমোমালি রাহমন

তাজিকিস্তানের একটি সমবায় খামারের প্রধান ছিলেন এমোমালি রাহমন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পরপরই তিনি দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন এবং তারপর থেকে ৩৩ বছর ধরে দরিদ্র ও পাহাড়ি এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দীর্ঘ শাসনকাল তাজিকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছে। রাহমনের নেতৃত্বে দেশটি স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে, যদিও তাঁর শাসনবিধি কেন্দ্রীভূত এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সমালোচনা করলেও, তাজিকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোতে তাঁর প্রভাব শক্তিশালী ও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে এমোমালি রাহমনের বয়স ৭৩ বছর।

ইউয়ারি মুসেভেনি

টানা পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসানের মধ্য দিয়ে ১৯৮৬ সালে উগান্ডায় ক্ষমতায় বসেছিলেন ইউয়ারি মুসেভেনি। এরপর থেকে তিনি ৩৯ বছর ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মুসেভেনি দীর্ঘ শাসনকালে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি বিতর্কিতভাবে ষষ্ঠ মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন। আগামী বছর উগান্ডায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে মুসেভিনি সপ্তম মেয়াদের জন্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সমালোচনা করলেও, দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোতে তাঁর প্রভাব এখনও শক্তিশালী। বর্তমানে মুসেভিনির বয়স ৮১ বছর।

ডেনিস সাসু এনগুয়েসো

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান রাষ্ট্রনেতাদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছেন ডেনিস সাসু এনগুয়েসো। তিনি মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট। প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন ১৯৭৯ সালে এবং ১৯৯২ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর গৃহযুদ্ধের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।

১৯৯৭ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটার পর এনগুয়েসো আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত তিনি ক্রমাগত দেশটির শাসনক্ষমতায় আছেন। দীর্ঘমেয়াদি শাসনের ফলে তাঁর প্রভাব কঙ্গোর রাজনৈতিক দৃশ্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ডেনিস সাসু এনগুয়েসো মোট ৪১ বছর ধরে কঙ্গোর নেতৃত্বে আছেন এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোয় তাঁর প্রভাব এখনও শক্তিশালী।

পল বিয়া

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতাদের তালিকায় ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়ার দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। তিনি ১৯৮২ সালের নভেম্বর থেকে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশের শাসনক্ষমতায় আছেন। অর্থাৎ বিয়া টানা ৪৩ বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে আছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানও তিনি।

বর্তমানে পল বিয়ার বয়স ৯২ বছর। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি টানা সপ্তমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও ওই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। আগামী অক্টোবরে পরবর্তী সাত বছরের মেয়াদের জন্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন বিয়া। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে তিনি দেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত।

তেওদোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা

১৯৭৯ সালে এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ইকুয়েটরিয়াল গিনির ক্ষমতায় আসেন তেওদোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা। এরপর থেকে তিনি ৪৬ বছর ধরে দেশটির শাসনক্ষমতায় টিকে আছেন। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ারও এক দশক আগে থেকে ওবিয়াং দেশের নেতৃত্বে অবস্থান করছেন। তাঁর দীর্ঘ শাসনামলে দমনপীড়ন নীতির কারণে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। এভাবে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং কেন্দ্রীভূত হয়ে উঠেছে। এই কারণে ইকুয়েটরিয়াল গিনি প্রায়শই আফ্রিকার ‘উত্তর কোরিয়া’ হিসেবে পরিচিত। ওবিয়াং-এর শাসনকালে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোতে তাঁর প্রভাব এখনও দৃঢ়ভাবে বজায় রয়েছে।

আরো জানুন

জীবন্ত শিশুর মতো দেখতে পুতুলের দাম ১২ লাখ টাকা

বায়ুদূষণের প্রভাবে দিল্লিতে বিখ্যাত কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও পড়াতে চান না মা–বাবা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *