বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।বাংলাদেশের সাভার উপজেলায় অবস্থিত পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি হলো সরকারের অন্যতম প্রধান পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র। পারমাণবিক সম্পদ বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় এবং কমিশনের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।
বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি বাণিজ্যিক উৎপাদন
এ পর্যন্ত মোট ৫৭১টি টেক-৯৯এম ক্রোমাটোগ্রাফিক জেনারেটর উৎপাদন করা হয়েছে, যা দেশের সব পারমাণবিক মেডিসিন সেন্টারে সরবরাহ করা হয়েছে। এসব জেনারেটরের সর্বমোট বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। এছাড়া মোট ২২ লক্ষ টাকার ৩০০ জিবিকিউ আয়োডিন-১৩১ (I-131 GI) উৎপাদন করা হয়েছে। আয়োডিন-১৩১ মূলত থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি থাইরোটক্সিকোসিস এবং থাইরয়েড ক্যান্সারের চিকিৎসায়ও এটি সুপরিচিতভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি সাফল্য
প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে ট্রিগা মার্ক-২ গবেষণা চুল্লির মাধ্যমে। এর বিমপোর্ট-২-এ একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নিউট্রন পাউডার ডিফ্র্যাক্টোমিটার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধাতব বস্তুর গঠন নির্ণয় করা এবং এসব উপাদানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
চিংড়ির খোসা থেকে কাইটোসান উৎপাদন
প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি সাফল্য হলো চিংড়ির খোসা থেকে কাইটোসান উৎপাদনের জন্য একটি সেমি-পাইলট প্লান্ট নির্মাণ। এই প্লান্টের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ কেজি কাইটোসান উৎপাদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি অন্যান্য কার্যক্রম
এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি স্বনামধন্য পত্র-পত্রিকায় মোট ১৫টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত একটি সার্ক সেমিনার আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি উন্নতি প্রকল্প
প্রতিষ্ঠানে একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও একজন মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করছেন, যাদের নেতৃত্বে ৩৬৬ জন কর্মকর্তা এবং প্রায় দুই শতাধিক বিজ্ঞানী কাজ করছেন। এই সুসংগঠিত টিম প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্যায়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়, যা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে নিয়োজিত। এর অংশ হিসেবে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানে একটি আধুনিক এনার্জি ইউনিট, কেন্দ্রীয় প্রকৌশল ওয়ার্কশপ, একটি সম্পূর্ণ সজ্জিত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং কর্মচারীদের সুবিধার জন্য একটি ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ করা হয়। এই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটিকে আরো কার্যকর ও উন্নত গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে।
আরো পড়ুন
- ইরানে হামলার হুমকি ট্রাম্পের
- ২০২৫এশিয়া কাপের চূড়ান্ত সময়সূচী প্রকাশ
- অভিনেতা মোশাররফ করিম নতুন ধারাবাহিক নাটক ২০২৫
বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান
সাভার ক্যাম্পাসের অধীনে পরমাণু সংক্রান্ত মোট ১২টি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরমাণু শক্তি গবেষণা, উৎপাদন এবং বিভিন্ন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কাজ করে। একত্রে তারা দেশের পারমাণবিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (আইএনএসটি)
ইন্সটিটিউট অফ ফুড এন্ড র্যাডিয়েশন বায়োলজি (আইএফআরবি)
ইন্সটিটিউট অফ ইলেক্ট্রনিক্স (আইই)
ইন্সটিটিউট অফ কম্পিউটার সায়েন্স (আইসিএস)
ইন্সটিটিউট অফ র্যাডিয়েশন এন্ড পলিমার টেকনোলজি (আইআরপিটি)
ইন্সটিটিউট অফ টিস্যু ব্যাংকিং এন্ড বায়োম্যাটারিয়াল রিসার্চ (আইটিবিবিআর)
ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মিনারেল (আইএনএম)
ইন্সটিটিউট অফ এনার্জি সায়েন্স (আইইএস)
ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (টিআই)
সেন্টার ফর রিসার্চ রিয়্যাক্টর (সিআরআর)
সেন্ট্রাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাসিলিটিস (সিইএফ)
সাইন্টিফিক ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট (এসআইইউ)
ইতিহাস
রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আদেশক্রমে ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পাকিস্তান পারমাণবিক এনার্জি কমিশনের অধিকাংশ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত ছিল, যার ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে পারমাণবিক গবেষণার সুযোগ সীমিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের হাতে কেবলমাত্র একটি ঢাকা পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার এবং তিনটি নিউক্লিয়ার মেডিকেল সেন্টার ছিল। এসব কেন্দ্রে দেশের পারমাণবিক গবেষণার কাজ সীমিত পরিসরে পরিচালিত হত। ১৯৭৫ সালে, গণকবাড়ি, সাভার উপজেলায় অবস্থিত ঢাকা জেলায় নতুন একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময় ধরে লোকবল সংকটের সমস্যায় পড়ে, যা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। তবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন উন্নয়ন ও পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং দেশের পারমাণবিক শক্তি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই কেন্দ্র দেশের বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও শক্তি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রিগা মার্ক-২ রিসার্চ রিয়্যাক্টর যুক্ত করা হয়, যা গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত। প্রতিষ্ঠানটির এলাকায় একটি আধুনিক এড়িয়া ক্লিনিক রয়েছে, যেখানে কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবন এবং একটি অর্থনৈতিক ও হিসাববিভাগের দালান, যা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়তা করে। ১৯৯৯ সালে উন্নয়নের অংশ হিসেবে এখানে একটি শক্তি একক, একটি প্রকৌশল কর্মশালা এবং একটি কেন্দ্রীয় পাঠাগার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও গবেষণার মান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই সব উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সেবাকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
Pingback: শাকিব খানে তাণ্ডব মুভির ২০২৫ থ্রিলার-অ্যাকশন - BD News Center
Pingback: মুদ্রাস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামলে সুদহার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক - BD News Center